ভূমিকা:
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, সম্পর্ক গড়ে তুলি। এই সম্পর্কের মাঝেই অনেক সময় আমরা অতিথি হই, আবার অনেক সময় আমাদের কাছে অতিথি আসে। কিন্তু প্রতিটি আতিথ্যের মূল্য কি সমান? আমাদের সমাজে ধনী মানুষের কাছে অতিথি হওয়া অনেকেই গৌরবের বিষয় মনে করেন। অথচ, দরিদ্র মানুষের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় যে সম্মান মেলে, তা অনেক সময় ধনীদের চাকচিক্যময় আতিথেয়তার চেয়েও বেশি হৃদয়স্পর্শী।
মূল আলোচনা:
ধনী মানুষের অতিথি হওয়ার মধ্যে এক ধরনের আড়ম্বর থাকে। বড় বড় বাড়ি, দামি খাবার, বাহারি পরিবেশ—সবই চোখ ধাঁধানো। কিন্তু অনেক সময় এই আতিথেয়তার পেছনে থেকে যায় একরাশ আনুষ্ঠানিকতা। অতিথিকে যতটা না ভালোবাসা যায়, তার চেয়ে বেশি দেখানো হয় সম্মান ও আড়ম্বর। অনেকেই অতিথিকে গুরুত্বহীনভাবে গ্রহণ করেন, শুধুমাত্র সামাজিক অবস্থান রক্ষার্থেই আপ্যায়নে মনোযোগ দেন। এতে অতিথির মন হয়তো তৃপ্ত হয় বাহ্যিকভাবে, কিন্তু হৃদয় তৃপ্ত হয় না।
অন্যদিকে, দরিদ্র মানুষ হয়তো বেশি কিছু দিতে পারেন না, কিন্তু তারা যা দেন, তা তাদের সর্বস্ব দিয়েই দেন। তাদের আপ্যায়নে মেলে আন্তরিকতা, ভালোবাসা আর সম্মান। তারা অতিথিকে শুধুমাত্র একজন অতিথি হিসেবে নয়, নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের অল্পতে থাকে অনেক কিছু—এক কাপ চা-ও যদি তারা দেন, সেটাও হয় আত্মার প্রশান্তি।
ধনীর অতিথি হয়ে অনেক সময় আমরা নিজেকে ছোট মনে করি, মনে হয় যেন কৃতজ্ঞ থাকতেই হবে। কিন্তু দরিদ্রের কাছে অতিথি হলে, সেখানে সম্মান থাকে, ভালোবাসা থাকে, এবং থাকে সমতা।
উপসংহার:
জীবনের আসল আনন্দ বাহ্যিক চাকচিক্যে নয়, হৃদয়ের আন্তরিকতায়। ধনীর অতিথি হয়ে কেবল বাহ্যিক গৌরব পাওয়া যায়, কিন্তু দরিদ্রের প্রধান অতিথি হয়ে মেলে অন্তরের স্পর্শ। তাই আমরা যেন আতিথেয়তার মূল্যবোধটা বাহ্যিক নয়, বরং আত্মিক দৃষ্টিতে বিচার করি। কারণ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতার আতিথ্যই মানুষকে সত্যিকারের সম্মানিত করে।
সত্যিই, ধনীর গুরুত্বহীন অতিথি হওয়ার চেয়ে দরিদ্রদের প্রধান অতিথি হওয়া অনেক ভালো।
0 Comments